সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি: সিদ্ধিরগঞ্জে সানাড়পাড় এলাকার বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভর্তি ও ফরম ফিলাপের ফি আদায় এবং শিক্ষকদের সাথে অসৌজণ্যমূলক আচরণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে এক শিক্ষিকার হাজিরা খাতা মুছে ফেলা, জোরপূর্বক চেক নিয়ে টাকা দাবি, যথাস্থানে ডিউটি করতে না দেওয়া, মানসিক নির্যাতন, নিয়োগ বাতিলের চেষ্টা উল্লেখ করে ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন ওই শিক্ষিকা।
জানা গেছে, অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন অধ্যক্ষ ওমর ফারুক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজটির এক শিক্ষক জানান, শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেওয়ার জন্য অধ্যক্ষ ওমর ফারুক ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন তার শিক্ষকের কাছ থেকে। এছাড়া আরো দুই শিক্ষকের কাছ থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছেন ওমর ফারুক। তিনি আরো জানান, অধ্যক্ষ ওমর ফারুকের মুখের ব্যবহার খুবই খারাপ। তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তিনি পকেট কমিটি তৈরি করেছেন।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, শামীমা সুলতানা নামে ওই কলেজের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক ২০১৮ সালে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়ার জন্য বিনা বেতনে ছুটি মঞ্জুরের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষ ওমর ফারুক ও প্রভাষক জসিম উদ্দিন পরস্পর যোগসাজসে ওই শিক্ষিকার ছুটি মঞ্জুর করে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকার অগ্রণী ব্যাংকের একটি চেক গ্রহণ করেন। পরে উক্ত চেকটি নগদায়ন করতে অস্বীকৃতি জানালে উক্ত দুইজন ওই শিক্ষিকাকে মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। বিভিন্নভাবে তাকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে ৫ মাস বেতন বন্ধ করে রাখে। তার দায়িত্বপ্রাপ্ত পরীক্ষার ডিউটি তার পরিবর্তে অফিসের পিয়ন দিয়ে করায়। করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাশে বাধা প্রদান করে মিথ্যা রেজিষ্টার তৈরি করেন। এছাড়া ওই শিক্ষিকার স্বাক্ষর ঘষা-মাজা করে তাকে অনুপস্থিত দেখায়। এই শিক্ষিকা বিদেশ থাকাকালীন তার বেতন শীটে স্বাক্ষর জাল করে তার একাউন্টে বেতনের টাকা নিয়ে আসে অধ্যক্ষ। পরে সেই টাকা উঠানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে এবং অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে অসম্মানজনক আচরণ করে। এছাড়া ওই শিক্ষিকার অফিসে রাখা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।
কলেজটির বাংলা প্রভাষক শামীমা সুলতানা জানান, ঘুষ দাবির প্রতিবাদ করায় তাকে অশালীন ভাষায় গালমন্দ ও হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়।
এতে ৮ মাসের অন্তসত্ত্বা ওই শিক্ষিকা মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে ভর্তি হন। এছাড়া ঘুষের মিথ্যা অজুহাতে ৫ মাস বেতন বন্ধ রাখেন। বিভিন্ন সময় কাগজে-কলমে মিথ্যা রেজিষ্টার তৈরি করে হুমকি-ধমকি দিয়ে হয়রানি করেন।
নাম না বলার শর্তে এক শিক্ষার্থী জানায়, শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপে বোর্ড নির্ধারিত ফি থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে আমাদের কাছ থেকে। ফরম ফিলাপের জন্য কলেজ থেকে আমাদের কাছ থেকে ২২৬৫ টাকা নিয়েছে। কিন্তু সোনালী সেবায় যেই ম্যাসেজ এসেছে, সেখানে দেখলাম প্রায় ১৫০০ টাকার মত পার্থক্য। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় এখানে অনেক প্রসেসিংয়ের বিষয় আছে, তোমরা বুঝবেনা। এসব বলে আমাদের এড়িয়ে যেতো তারা। তাছাড়া কলেজের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১ হাজার করে টাকা নেওয়া হয়।
কলেজটির ম্যানেজিং কমিটির সাবেক এক সদস্য জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষের কর্মকান্ডে তিনি বিরক্ত। তিনি সহ্য করতে না পেরে সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি নেন। এর বাইরে তিনি কলেজের বিষয়ে আর কোন কিছু বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন নি।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ওমর ফারুক জানান, মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য শিক্ষিকা শামীমা সুলতানা কোন মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দেননি। তার কাছ থেকে জোরপূর্বক চেক এবং তার বেতনের টাকা নেওয়ার কোন ক্ষমতা আমার বা অন্য কোন শিক্ষকের নেই। তাছাড়া নিয়োগ বাণিজ্য সহ অন্যান্য অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। এগুলো ভিত্তিহীন।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিফাত ফেরদৌস বলেন, আমি অভিযোগের বিষয়ে জেনেছি। শিক্ষকের বিষয়গুলো তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন আকারে শিক্ষাবোর্ডে অবগত করলে তারা প্রতিকারমূলক কোন ব্যবস্থা নেবে। যেহেতু শিক্ষকতার বিষয়, এক্ষেত্রে কারো প্রতি যেন অমানবিক কিছু না হয় সেদিক খেয়াল রাখা হবে।