মোঃ ইসলাম : কৃষি নির্ভর ও কৃষিতে স্বনির্ভর দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। সব ধরনের ফসল এ জেলায় ভালো ফলে বলে বছরের প্রায় সব মৌসুমেই ব্যস্ত থাকে এখানকার কৃষকরা। এবারে বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। অন্যান্য মৌসুমে কৃষকদের মাঝে স্বতস্ফুর্ত ভাব দেখা দিলেও এবারে আগ্রহের কমতি দেখা দিয়েছে জেলার বোরা চাষিদের মাঝে।
সারা বছরের এ মৌসুমটাতে বোরো চাষে জমিতে পানির চাহিদা বেশি থাকায় বাড়তি সেচ দিতে হয় কৃষকদের। আর তাই দরকার হয় বাড়তি জ¦ালানির ( ডিজেল)। একদিকে যেমন ডিজেলের বাড়তি মূল্য গুনতে হয় তাদের অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি দামে কিনতে হয় সার। এছাড়াও সারের কৃত্রিম সংকট তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে বোরো চাষে দিশেহারা হয়ে পরেছেন এখানকার কৃষকরা।
কৃষকদের অভিযোগ সারের কৃত্রিম দাম ও সংকট রোধ না করলে এবং সাথে জা¦লানির মূল্য কম না করলে তারা আগ্রহ হারাবেন কৃষি থেকে। আর কৃষি প্রধান এসব এলাকার কৃষকরা তাদের কাজে আগ্রহ হারালে বড় ধরনের বিপর্যয় নামতে পারে কৃষিতে যা বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে জাতীয় অর্থনীতিতে ।
জেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমি। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন। আর এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ধান রোপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি জমিগুলোতে আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যেই রোপণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর বোরো ধানের ক্রয় মূল্য ছিল ২৬ টাকা কেজি। সে হিসেবে ২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রেক টন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ি ৬৯৬ কোটি টাকার ধান উৎপাদন হবে ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে।
সদর উপজেলার দানার হাট ঠাকুরদিগি গ্রামের কৃষক আব্দুল মোমিন বলেন, ‘সরকার বলছে সারের কোন ঘাটতি নাই কিন্তু বাজারে তাদের নির্ধারিত দামে ঠিক মতো কোন সার পাওয়া যাচ্ছেনা, গেলেও দাম দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ। আলু রোপনের সময় ও এখন চায়না ধান করার সময়েও ঋণ করে ইউরিয়া ১২’শ, টিএসপি ১৭’শ ও পটাশ (এমওপি) ১৬’শ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। সরকার যদি আমাদের দিকে না দেখে তাহলে আমরা কৃষকরা মাঠে মারা যাবো।
লক্ষীপুর গ্রামের কৃষক মনছুর বলেন, ‘ডিজেল ও সার-বিষের দামের জন্য আমরা ক্ষেতের ঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারছি না। টাকার অভাবে এতো দামে আমরা তেল, সার-বিষ কিনে কৃষি করতে হিমশিম খাচ্ছি।
অন্যদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম সারের কোনো ঘাটতি নেই বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘জেলায় চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সার মজুদ আছে ও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেউ বেশি দামে সার বিক্রয় করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এবিষয়ে আমাদের মনিটরিং কর্যক্রম অব্যাহত আছে ও থাকবে। এছাড়াও বোরো ধান আবাদে কৃষকদের আমরা সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি।