এ এইচ অনিক, বিশেষ প্রতিনিধি: ; ‘হোগলা’ সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণ- দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের নদী-নালার কিনার বরাবর প্রচুর পরিমাণে হোগলা জন্মে, সিলেটের বিল, হাওর ও অন্যান্য নিচু এলাকায় প্রচুর হোগলা জন্মে। এছাড়াও দেশের কয়েকটি অঞ্চলে হোগলা জন্মে। এইসব অঞ্চলের অসংখ্য পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই বংশপরম্পরায় হোগলা পাতা দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরির পেশায় জড়িত ছিল এক সময়।
হোগলা ঝোপের মতো দেখতে ছোট আকারের গুল্ম (Typha elephantiana)-এর স্থানীয় নাম। এ উদ্ভিদ (Typhaceae) গোত্রের এক সদস্য। হোগলা দেখতে অন্যান্য সাধারণ ঘাসের মতোই, এর উচ্চতা হয় দুই থেকে পাঁচ মিটার পর্যন্ত। পত্রফলক চেপ্টা এবং স্পঞ্জের মতো নরম কলায় গঠিত। এ উদ্ভিদ থেকে প্রচুর পরিমাণ পরাগরেণু উৎপন্ন হয়। হোগলাপাতার ইংরেজি নাম সি-গ্রাস বা সামুদ্রিক ঘাস। এর মূলতন্ত্র আঁশ বা তন্তুর মতো অংশে গঠিত। পৌষ মাসে পাতা কেটে ভালো করে রোদে শুকিয়ে আঁটি বাঁধা হয়।
বর্তমানে ডিজিটালের ছোঁয়ায় ও অবৈধ দখলে হোগলাপাতা চাষের জমি কমে এই শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। অথচ প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এটি হতে পারে দেশের অর্থনৈতিক জোগানদাতা।
উপকূলীয় এলাকার মানুষের কাছে এই হোগলাপাতার তৈরি সামগ্রী সংসারের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বাড়তি আয় রোজগারের একটি মাধ্যম ছিল। এছাড়া হোগলাপাতার ফুল বা রেণু সুস্বাদু খাবার হিসেবে মানুষ শখ করে খেয়ে থাকেন।
হোগলাপাতা দিয়ে বিছানা, দড়ি, ফ্লোরম্যাট, টেবিল, রান্নার সামগ্রী রাখার ঝুড়ি, পেপার, ট্রে, ফলের ঝুড়ি, শোপিসসহ বিভিন্ন পণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বেত ও বাঁশের চেয়ে দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এসব সামগ্রী তৈরিতে খরচও কম।
একসময় হোগলাপাতার মাদুর ছিল শৌখিনতার প্রতিক। এ অঞ্চলের পরিবারগুলো হোগলাপাতার পণ্য তৈরির কাজে নেমে পড়ত সংসারের বাড়তি আয়ের আশায়। গ্রামের কৃষক, দিনমজুর, অনেকেই এ পেশার সাথে জড়িত। বর্তমানে হোগলাপাতার দাম বৃদ্ধি ও মজুরির ন্যায্য মূল্য তারা পাননা বিধায় এ কাজে তারা উৎসাহ হারাচ্ছেন।
হোগলাপাতা শিল্প নিয়ে কোন গবেষনাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি বেসরকারিভাবে পৃষ্টপোষকতা করলে অনেক মানুষের কর্মস্থান সৃষ্টি হবে এবং অর্থনেতিকভাবে লাভবান হবে এ অঞ্চলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী।