
ছবি: সংগৃহিত
ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সবসময় শান্তি চাই, আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো- একদিকে করোনা মহামারি, অন্যদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ- মানুষকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।
পৃথিবীকে কোনো যুদ্ধ যেন আর না হয় সেই আকাঙ্ক্ষা ব্যক্তি করে তিনি বলেন, পৃথিবীর মানুষ যেন শান্তিতে বাস করতে পারে, মানুষের জীবনমান যেন উন্নত হয়, সেটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাসব্যাপী ‘১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০২২’ উদ্বোধনকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গনভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি’র ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার তৃণমূলে সাংস্কৃতিকভাবে মেধাবীদের মেধা বিকাশের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব সংস্কৃতিমনা মানুষ আছে তাদের মেধা, মনন, জ্ঞান ও ক্ষমতা বিকশিত করার পদক্ষেপ নিয়েছি।’
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় আর্ট গ্যালারিতে ৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় প্রদর্শনীতে বাংলাদেশসহ ১১৪টি দেশের প্রায় ৪৯৩ জন শিল্পীর মোট ৬৪৯টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের এই সংস্কৃতি সেবা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চাই। একদিকে তাদের যেমন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করছি, পাশাপাশি তাদের শিল্প মনের বিকাশও যাতে হয় সেই পদক্ষেপও আমরা নিচ্ছি।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে তাঁর সরকার শিল্পকলা একাডেমি যাতে সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে তার মাস্টার প্লান তৈরি করে। সেখানে জাতীয় নাট্যশালা, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার, স্টুডিও থিয়েটার, সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন, চারুকলা মিলনায়তন ও উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। আরো ৩টি মিলনায়তন নির্মাণের কাজও চলছে।
তিনি বলেন, আমরা ৬৪ জেলায় শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবন তৈরি করে দিয়েছি। ৪৯৩টি উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমি স্থাপন করা হয়েছে অর্থাৎ আমরা এই সংস্কৃতি সেবা একদম তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চাই।
শেখ বলেন, এ সমস্ত জায়গায় আমাদের দেশি-বিদেশি চিত্রকর্ম সংরক্ষণ ও প্রদর্শণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চারুকলা, সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক চলচ্চিত্র, ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীত বা লোক সংস্কৃতি এসব উৎসবেরও আয়োজন করা হচ্ছে। কারণ, আমাদের নিজস্ব যে সংস্কৃতি আছে সেটাও যাতে বিকশিত হয়, সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীতে ছয় জন শিল্পীকে সম্মানসূচক পুরষ্কার এবং অন্য তিনজনকে গ্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের জুরি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী রফিকুন নবী পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
কে এম খালিদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর, জুরি বোর্ডের সদস্য এবং বিশিষ্ট পোলিশ শিল্প সমালোচক জারোস্লা সুচান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং ‘১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০২২’ এর প্রধান সমন্বয়কারী লিয়াকত আলী লাকী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
সংস্কতি চর্চা যেন গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছানো যায় সে জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেয়া নানা পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর দেশীয় শিল্প সংস্কৃতি চর্চা এবং বিকাশের লক্ষে ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্প সংস্কৃতি যেকোন জাতির আত্মপরিচয় বহন করে। শিল্পীর তুলির আচড়েই উঠে আসে একটি দেশ ও জাতির রাজনৈতিক অবস্থান এবং তাদের সাংস্কৃতিক অবস্থান বা প্রাকৃতিক পরিবেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যে সংগ্রাম সে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের সংগ্রাম সে সংগ্রামও প্রাণ পেয়েছিল শিল্পীর আঁচড়ে এবং আমাদের শিল্পীরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন সবকিছুতেই আমাদের শিল্পীরা বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের শিল্পীদের তুলির আঁচড়েই উঠে এসেছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, প্রাকৃতিক পরিবেশ, ঋতু বৈচিত্র।
তিনি বলেন, যে কোন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে যখন আমাদের দেশের মানুষ সংগ্রাম করেছে সেই প্রতিবাদের ভাষাও আরো সমৃদ্ধি লাভ করেছে। মানুষের চেতনাকে শাণিত করেছে শিল্পীর তুলির আঁচড়।
তিনি বলেন, ‘সেখানেও আমি জানি কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক-তারাও মানুষের এই ধরনের কষ্ট, মানুষের দুঃখ, যন্ত্রনা এবং যুদ্ধের যে ভয়াবহতা সেটাও শিল্পীর আঁচড়ে উঠে আসবে, যাতে এই ধরনের যুদ্ধ যেন আর না হয়।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শিল্পীরা বাংলাদেশে আসায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কষ্ট করে আমাদের এই সুজলা, সুফলা সুন্দর বাংলাদেশে এসেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আপনারা এখানে আসার ফলে এই যে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধরনের যে সংস্কৃতি বা চিত্রকর্ম অথবা তাদের মানসিক বিকাশের যে সুযোগ, আমাদের দেশের মানুষও এটা থেকে অনেক জ্ঞান আহরণ করতে পারবে। একে অপরকে জানতে পারবে, একে অপরের শিল্পী মনকে জানতে পারবে। তুলির আঁচড়ে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি যে বিকশিত হয় সেটা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি এটা আমাদের শিল্পীদের জ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধশালী করবে। আরো নতুন নতুন চিন্তা চেতনার ধারা নিয়ে আসবে।’