নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ধরণের শিল্পকারখানার বর্জ্যমিশ্রিত পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদ, শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা ও জেলার বিভিন্ন খাল- বিলে। ফলে জেলার পানি এতটাই দূষিত হয়ে পড়েছে যে দুর্গন্ধে সেখানকার মানুষের বসবাস করাটাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে স্থানীয় ব্যক্তিরা প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ করতে বাধ্য হয়েছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে যে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদ ও বশিরগাঁও খালে বিভিন্ন শিল্পকারখানার বর্জ্যমিশ্রিত দূষিত পানিনিষ্কাশনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ১০ গ্রামের লোক। গত শনিবার অনুষ্ঠেয় প্রতিবাদ সভা থেকে তারা দূষিত পানি নিষ্কাশন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, শিল্পকারখানাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই কাজটি করে আসছে। এতে কৃষকেরা নদী ও খালের পানি সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারছেন না। দূষিত পানির দুর্গন্ধে তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলায় রয়েছে অসংখ্য ডাইং কারখানাসহ বিভিন্ন ধরণের অসংখ্য শিল্পকারখানা। এসব শিল্পকারখানার অনেকগুলোরই পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। আবার যেসব কারখানার ছাড়পত্র রয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই বর্জ্য পরিশোধন ঠিকমতো করছে না।
এ ধরনের শিল্পকারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে তরল বর্জ্য পরিশোধনাগারের (ইটিপি) মাধ্যমে বর্জ্য পরিশোধন বাধ্যতামূলক হলেও অধিকাংশ শিল্পমালিক তা মানছেন না। বছরের পর বছর ধরে তারা তাদের শিল্পকারখানা থেকে সৃষ্ট ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত পানি নদী, খালসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ে নিষ্কাশন করে আসছেন। এতে শুধু নদী, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর স্বাস্থ্যের উপরও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
শুধু নারায়ণগঞ্জে নয়, সারাদেশেই চলছে এ ধরনের পরিবেশ বিধ্বংসী, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড।এ বিষয়ে তদারকির দায়িত্বে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তর, নদী রক্ষা কমিশনের আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করে।
ইটিপির মাধ্যমে বর্জ্য পরিশোধন ছাড়া কোনো শিল্পকারখানা যাতে নদী, খালের মতো উন্মুক্ত জলাশয়ে ব্যবহৃত পানি নিষ্কাশন করতে না পারে, সে জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে কঠোর তদারকি চালাতে হবে। এ বিষয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের কঠোর প্রয়োগ চাই।
লেখক: সাংবাদিক মোঃ কবির হোসেন।