![](https://www.janatarsomoy24.com/wp-content/uploads/2024/09/Untitled-3-1.jpg)
শাহজাহান সিরাজ সবুজ- কবি, কলামিস্ট, সাংবাদিক
বাংলাদেশের জনসাধারণ নিয়মতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতার পালাবদলে বিশ্বাসী। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগা হলো, অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় আসা শাসকেরাই বাংলাদেশকে অধিকাংশ সময় শাসন করেছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্যে দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে কতটা সক্ষম হবে, তা সময় বলে দিবে। বর্তমান সময়ে জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের ব্যাপক সম্ববনা তৈরি হলেও কিছু কিছু ঘটনায় মানুষের মধ্যে অবিশ্বাসেরও জন্ম হচ্ছে।
শেখ হাসিনা সরকার সহ পূর্ববর্তী সরকার গুলোর শাসনামলে গণহারে যেসব মামলা হয়েছে, সময়ের ব্যবধানে সেসব মামলা গণহারে সমাপ্তি হয়েছে। বর্তমান সময়েও গণহারে মামলা হচ্ছে। একেকটি মামলায় ৩০/৪০ জনকে হুকুমের আসামি এবং কমবেশি শতাধিক অজ্ঞাতনামা লোককে আসামি করা হচ্ছে। কোনো কোনো মামলায় পাঁচ শতাধিক লোককে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হচ্ছে। এইসব মামলার তদন্ত কাজ ৫০/৬০ বছরেও শেষ করতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। বিগত সরকারগুলোর সময়ে গণহারে মামলাগুলোর যে পরিণতি হয়েছে, এই মামলাগুলোর একই পরিণতি হতে পারে।
গত ৫৩ বছরের সরকারগুলোর স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী চরিত্রের কারণে দেশের জনসাধারণ সহজে কারো প্রতি আস্থা রাখতে পারেনা। তাই জনআকাঙক্ষা পূরণ করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত সরকারগুলোর চেয়ে ভালোভাবে দেশ পরিচালনা করে দেখাবে এটা এখন সময়ের দাবী। ছাত্র- জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে না পারে এবং নিগৃহীত- নিপীড়িত গণমানুষের ঘরে এই আন্দোলনের ফসল না পৌঁছে দিতে পারে, তাহলে জনসাধারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আস্থা হারাবে। দেশের জনসাধারণ এখন আর কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে চায় না।
দেশে একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজমান। আইন হাতে তুলে নেবার প্রবণতা ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়। প্রথমে পতিত সরকার ও তার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এবং থানাগুলোতে হামলা, অগ্নি সংযোগের সংযোগের ঘটনা ঘটেছে ব্যাপকভাবে। এতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এরপর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এখন পীর- আউলিয়াদের মাজারে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে থেকে জানা যাচ্ছে। এইসব ঘটনায় গণ-অভ্যুত্থানের সমন্বয়ক সহ গণ-অভ্যুত্থানকারিরা সংশ্লিষ্ট নয় বলে বলা হচ্ছে। তাহলে এইসব কারা করছে? কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন হাতে তুলে নেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী হত্যাকাণ্ড সমূহের যেমন দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতে হবে। তেমনি পরবর্তী সময়ের ঘটনা সমূহের বিচার হওয়া উচিত।
বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপদেশে ইসলাম ধর্ম এসেছে অলি- আউলিয়াদের মাধ্যমে। তখন এদেশে কোনো মাদ্রাসা ছিলনা। দুঃখজনক বিষয় হলো, যেসব আউলিয়াদের মাধ্যমে এদেশে ইসলাম ধর্ম এসেছে। তাদের মাজারে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা সত্যি দুঃখজনক, লজ্জাজনক। অলি- আউলিয়াদের মাজারে ভাঙচুর করে মন্দির পাহারা দিচ্ছেন। এতে আপনারা কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন। মন্দির পাহারা দেওয়ায় আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের এমন ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করতে যাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্ভয়ে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে। তাহলে মন্দির পাহারা দিতে হবে না। যদি কোনো মাজারে কেউ ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড করে, তার জন্য ওই মাজারে শায়িত ব্যক্তিটি দায়ী নয়।মাজারে ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড কেউ পরিচালনা করলে, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কবর, মাজার, রওজা একই জিনিস। সাধারণত আমার মতো একজন সাধারণ মানুষের সমাধিস্থলকে কবর বলা হয়ে থাকে, একজন অলি- আউলিয়ার সমাধিস্থলকে মাজার বলা হয়ে থাকে, একজন নবী-রাসুলের সমাপ্তিস্থলকে রওজা বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সর্বত্রই মাজার, রওজা শরীফ রয়েছে। কবর, মাজার, রওজা শরীফ জিয়ারত করাতো ইসলাম বিরোধী নয়। যারা মাজারে গা’জা খায়, নাচানাচি করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে, কেউ আপত্তি করবে না। দেশের জনসাধারণ বিশৃঙ্খলা চায় না। বাহ্যিক পরিবর্তন শেখ হাসিনা সরকারও করেছে। একজন নোবেল বিজয়ীকে পেয়েও যদি দেশের বিশৃঙ্খলা থামানো না যায়, তাহলে জনসাধারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আস্থা হারাবে অচিরেই।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশকে ন্যূনতম পাঁচটি প্রদেশে ভাগ করে একটি ফেডারেল কাঠামোর রাষ্ট্র করার পরামর্শ দিয়েছেন। বাংলাদেশ অনেক দেশের একটা প্রদেশের সমান বড় নয়। তাহলে কেনো বাংলাদেশকে পাঁচটি প্রদেশে ভাগ করতে হবে। উনি উনার মতো করে ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ দিয়েছেন। মোটামুটি একটা রূপরেখাও দিয়েছেন। দেশের মানুষ চাইলে অনেককিছু হতে পারে। আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ, আমার এই লেখার মাধ্যমে একটা ভবিষ্যত বানী করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে যদি পাঁচটি প্রদেশে ভাগ করা হয়, তাহলে প্রদেশ ঘোষণা হওয়ার কিছু বছরের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম স্বাধীনতা ঘোষণা করবে। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে হাজারো ঝামেলার মধ্যে আছি। এমন কোনো বক্তব্য- বিবৃতি আমাদের উচিত নয়, যে বক্তব্য- বিবৃতির দেশের জনসাধারণের দ্বিধাবিভক্তির জন্ম হয়।
যেসকল রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবি এবং ব্যক্তি বিশেষ নারী নেতৃত্বের ঘোরতর বিরোধী ছিল, হয়তো জায়নামাজে বসেও মহান আল্লাহর দরবারে নারী নেতৃত্বের বিরোধিতা করেছে। তাদের অনেকেই বিগত বছর গুলোতে নারী নেতৃত্বের লেজুড়বৃত্তি করে নিজেদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বর্তমান সময়ে তাদের অনেকেই বোল পাল্টাচ্ছে। এইসব গিরগিটিদেরও জনগণের চিনে রাখা উচিত। আমাদের মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনার শাসনামল ও আওয়ামীলীগের বিরোধিতা করলেই দেশপ্রেমিক ভাবার কোনো সুযোগ নেই। চলমান পরিস্থিতিতে অনেকেই ডিগবাজি দিচ্ছে। রাতারাতি দেশপ্রেমিক সাজার চেষ্টা করছে। দেশের জনগণ জানে কারা কারা বিগত সরকারের কাছ থেকে রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। অতএব সাধু সাবধান।
লেখক: শাহজাহান সিরাজ সবুজ- কবি, কলামিস্ট, সাংবাদিক।