শ্রীপুর (গাজীপুর সদর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের শ্রীপুরে এক যুবককে চুরির অপবাদ দিয়ে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ছেলেকে বাঁচাতে না পেরে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে থানায় হাজির হয়েছেন বাবা।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে তাকে আটক করে চোরের অপবাদ দিয়ে আটকে রেখে মারধর করে। পরে স্বজনরা স্থানীয়দের সহায়তায় যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে যুবকের মৃত্যু হয়।
নিহত যুবক রানা মিয়া (৩০) উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের মো. আমিরুল ইসলামের ছেলে। সে স্থানীয় একটি কারখানায় চাকুরি করতো।
অভিযুক্তরা হলেন, স্থানীয় ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী কেওয়া পশ্চিম খন্ড গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে মো. শিপন মিয়া (২৫), আকাশ মিয়া (২২), উজ্বল মিয়া (২৫) ও আবুল কাশেমের ছেলে ইমন (২৬)।
নিহত, অভিযুক্তদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিপন ভাঙ্গারি ব্যবসা করে। এলাকা থেকে ভাঙ্গারি মালামাল সংগ্রহ করতে ব্যবহার করা হতো ১৫টি ভ্যান গাড়ি। সম্প্রতি বিভিন্ন সময় শিপনের পাঁচটি ভ্যানগাড়ি চুরি হয়।
শনিবার ভোররাত তিনটার দিকে তাকে ভ্যানগাড়ি চুরির অভিযোগ এনে আটকে রাখে শিপন। পরে রাত থেকে দিনভর মারধর ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মারধরে তিনটি ভ্যানগাড়ি চুরির কথা স্বীকার করে রানা। পরে স্থানীয়রা রানাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। স্থানীয়দের অনুরোধ উপেক্ষা করে সবার সামনেই মারধর করে অভিযুক্তরা। পরে তার কাছ থেকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দেয়।
নিহতের বাবা আমিরুল ইসলাম জানান, তাদের হাত থেকে ছেলেকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। পরে তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি বারবার আকুতি মিনতি করলেও আমার ছেলেকে তারা ছাড়লো না, আমি তাদের পায়ে পর্যন্ত ধরেছি। তবুও তারা আমার কথা শুনলো না। সবশেষ আমার ছেলেকে মেরেই ফেললো। আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে দফায় দফায় নির্যাতন করে বুকের পাজর, দুই হাত ও পা ভেঙে দেয়। আমার ছেলের শরীরের এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা নেই যে ঐ স্থানে আঘাত করেনি। আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে, আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই, বিচার চাইতে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে সরাসরি থানায় এসেছি।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে। এবিষয়ে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী শিপনের বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এসময় তার মা রোকেয়া আক্তার বলেন, শিপন ব্যবসায়ীক কাজে এলাকার বাইরে রয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে কাজ করছে পুলিশ।