মোঃ রফিকুল ইসলাম মৃধা, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি :
মানিকগঞ্জের ঘিওরে সুদীর্ঘ ভোগান্তির পর অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে দুই উপজেলার ৬ ইউনিয়নবাসী।দীর্ঘদিনের নদী ভাঙ্গণের কড়াল গ্রাসে উপজেলার কুস্তা গ্রামের অসংখ্য ঘর-বাড়ি, ফসলী জমি, মসজিদ-মাদ্রাসা, ব্রীজ-কালভার্ট হারিয়ে গেছে পূরণো ধলেশ্বরী নদীর অতলগহ্বরে। সেই নদী গিলেছে, দেড় কিলোমিটার পাকা রাস্তা।যে রাস্তা টি ঘিওর উপজেলা কে প্বার্শবর্তী দৌলতপুর উপজেলাকে সংযোগ করেছিলো, দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র অবলম্বন ছিলো এই রাস্তাটি।
দৌলতপুর থেকে ঢাকাগামী বাস, ট্রাক সহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতো এই রাস্তা দিয়েই। ১৯৮৮ সালের বন্যায় ঘিওরের শ্রীধরনগর এলাকায় একটি বেইলী ব্রীজ নদীতে ধ্বসে পরায় রাস্তাটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ঘিওর উপজেলার সদর ও পয়লা ইউনিয়ন এবং দৌলতপুর উপজেলার খলশী, জিয়নপুর, চরকাটারী ও বাঘুটিয়া ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ ছোটছোট যানবাহনে চেপে কুস্তা গ্রামের উপর দিয়ে যাতায়াত করতো। ১৯৯৮ সালের বন্যায় কুস্তা গ্রামে ধলেশ্বরী নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গণে রাস্তার বেশ কিছু অংশ নদী গর্ভে বিলীণ হয়ে যায়। স্থায়ীভাবে নদীশাষন না করায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে রাস্তা সহ ঘর-বাড়ি, ফসলী জমি ক্রমশঃ নদীতে বিলীণ হতে থাকে।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে তীব্র নদী ভাঙ্গণে রাস্তাটির নদীভাঙ্গণ জনচলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।২০১৪ থেকে ২৩ ভোগান্তি থেকে চরম ভোগান্তিতে পৌঁছে যায় মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থায়। সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়েই পাঁয়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয় দুই উপজেলার ৭৭ টি গ্রামের অসংখ্য মানুষকে। পণ্য সামগ্রী হাট-বাজারে নিতে বিকল্প পথে ৫-৭ কিলোমিটার ঘুরে কিম্বা পণ্যসামগ্রী মাথায় করে পায়েহেটে যাতায়াত করে আসছেন বিগত ১০ যাবত। এতে করে অতিরিক্ত টাকা সময় ও শ্রম খরচ করতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
অবশেষে গত ডিসেম্বরে কাবিখা ২য় পর্যায়ের প্রকল্প, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঘিওর সদর ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ২৫৬ মিটার রাস্তার কাজের উদ্বোধন করেন ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ অহিদুল ইসলাম টুটুল।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে স্থানীয় সাংসদ এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ৯০ লক্ষ টাকার কাজ করেছিলেন। এরপর ধলেশ্বরী নদীর ভাঙ্গণ ঠেকাতে দুই বছর আগে কুস্তা- নারচী এলাকায় ১ কোটি ৭৮ লাখ ১৮ হাজার টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ করা হয়। কিন্তু কাজ শেষ হতে না হতেই বর্ষার পানির তোড়ে বর্ষাশেষে কাজের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
দীর্ঘদিন পরে হলেও রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী করায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন স্হানীয়রা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ মোশারফ হোসেন মুসা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরেছিল। কাজটি শেষ হলে মানুষের যাতায়াতে এখন অনেক সুবিধা হবে বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ঘিওর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মুসা বলেন, চলমান এ কাজটি সম্পন্ন হলে ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার যোগাযোগ খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।
ঘিওর সদর ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, এই রাস্তাটি ছিল দুই উপজেলার ৭৭টি গ্রামের মানুষের স্বপ্ন। তাদের এ স্বপ্ন পুরণের কাজ করতে পেরে আমি ভীষন খুশি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়র (মানিকগঞ্জ)-এর সাথে কথা বললে তিনি রাস্তার কাজের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি। তবে কাজ সম্পন্ন হলে রাস্তাটি স্থায়ীকরণের বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।
এদিকে রাস্তার এ অংশে মাটি ভরাট করে চলাচলের উপযোগী করায় সন্তোষ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। তবে নদী ভাঙ্গণ প্রতিরোধ ও নদীতে বিলীণ হওয়া রাস্তার বাকী অংশটুকু পূণরুদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল।