নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভারের আশুলিয়ায় হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আসামিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারসহ ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) সকালে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে এসময় আশে-পাশে থাকা আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনে একত্বতা প্রকাশ করতে দেখাযায়।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছয়দফা দাবিগুলো হলো, মামলার প্রধান আসামিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার, অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেপ্তার, প্রধান আসামি ওই ছাত্রের পলাতক পরিবারের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা, নিহত শিক্ষকের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্থানীয় ও বাইরের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার ভেদাভেদ দূর করতে আইন প্রণয়ন এবং কিশোর গ্যাং ও কিশোর অপরাধ দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে অবস্থান করে তারা ন্যায়বিচার চায়’, ‘শিক্ষক হত্যার বিচার চায়’, ‘কিশোর অপরাধ দমন হোক’, ‘হত্যাকারীর ফাঁসি হোক’, ‘শিশু বলে ছাড় পাবে কেন মস্ত অপরাধ, যুবক হলে এরাই গড়ে দুর্নীতির বাঁধ’, ‘শিক্ষকদের মানহানি হচ্ছে পদে পদে, আমরা সবাই যাচ্ছি ডুবে অবক্ষয়ের নদে’ স্লোগান সংবলিত পোস্টার হাতে নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা।
পরে তাঁরা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল নিয়ে তাঁরা স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাবি আদায়ে সেসব প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে গণসংযোগ করেন।
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার বলেন, জাতি গড়ার কারিগরকে যে হত্যা করতে পারে, তার এ সমাজে থাকার কোনো সুযোগ নেই। ওই ছাত্রের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা যাঁরা দিনের পর দিন এটি সহ্য করেছেন, পরিবারের সেই সব সদস্যও দোষী। সে অভিযোগ করে বলে, ঘটনার পরপরই ওই ছাত্রের বাবা এসে হত্যাকারি জিতুকে আটক অবস্থা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।বের্তমান পুরো পরিবার পলাতক। মুন্নি সবার শাস্তি দাবি করে।
এ সময় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরিদশর্ক (কলেজ) মো. রবিউল আলম নমাবেশে উপস্থিত হয়ে বলেন, আমরা আজ চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটিতে ঘটে যাওয়া বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিলাম। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে, আমরা আশা করছি দ্রুত আসামি গ্রেফতার হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এমদাদুল হক বলেন, বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এর আগে, গত শনিবার দুপুরে দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ওই ছাত্র ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের ওপর। প্রথমে ওই ছাত্র শিক্ষকের মাথায় আঘাত করে এবং পরে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। এ ছাড়া স্ট্যাম্পের সুচালো অংশ দিয়ে পেটের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে।
গুরুতর আহত অবস্থায় উৎপলকে প্রথমে আশুলিয়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেওয়া হয়। আঘাত গুরুতর হওয়ায় পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার ভোরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ চলছিলো