নিজস্ব প্রতিনিধি: ফ্রান্স প্রবাসী ইয়াসিন মাহমুদ কাউসারের স্ত্রী নিশাত আক্তার স্বর্ণালংকার সহ প্রায় ৬৫ লাখ টাকা হাতিয়ে ইউরোপ যাওয়ার কথা বলে আমেরিকায় চলে যায়। ফ্রান্স প্রবাসী ইয়াসিন মাহমুদ কাউসারের স্ত্রী নিশা আক্তারের এমন প্রতারণামূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জের দক্ষিণ জামসা বাজার সংলগ্ন নবীনগর তেতুলতলা মোড়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে।
ইউপি সদস্য মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও প্রবাসীর বন্ধু নুর মোহাম্মদ সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ওসমান মোল্লা, হালিমা বেগম প্রমুখ।
বক্তাগণ বলেন, নিশাত আক্তার স্বামীর কাছে না গিয়ে আমেরিকায় গিয়ে আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন করেছে প্রবাসী ইয়াসিন মাহমুদ কাউসারের। স্ত্রীর এমন প্রতারনায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি।
বক্তারা আরো বলেন, বিবাহের পরে ৮ বছর স্বামীর খরচে লেখাপড়া করেছে নিশাত। প্রতারনার উদ্যেশ্যে নিজের গর্ভের সন্তান নষ্ট করেছে। স্বামীর গহনা, টাকা-পয়সা হাতিয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় আমরিকায় চলে গিয়েছে।
বক্তারা বলেন, নিশার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছেন, গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়েছে। মানববন্ধনে সরকারের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন তারা।
বক্তাগণ বক্তব্যে আরো বলেন, ফ্রান্স প্রবাসী স্বামীর কাছে না গিয়ে স্বর্ণালংকারসহ ৬৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিশাত আক্তার গোপনে আমেরিকায় চলে যায়, কথা ছিলো ছাত্র ভিসায় ইউরোপ যাবে।
জানা যায়, ফ্রান্স প্রবাসী ইয়াসিন মাহমুদ কাউসার (৩৬) তাঁর সাথে গত ২৮ মার্চ ২০১৪ তারিখে উভয় পারিবারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিশাত আক্তারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। এরপর গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে ফ্রান্স হতে শ্বশুড় বাড়ি আসেন স্বামী ইয়াসিন মাহমুদ।
এই প্রতারণার বিরুদ্ধে ইয়াসিন এর বাবা মুক্তিযোদ্ধা আঃ হামিদ বাদী হয়ে ৬ জনের নামে ঢাকা বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্টেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। বিজ্ঞ আদালত বাদীর আর্জি আমলে নিয়ে নবাবগঞ্জ থানায় আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্য প্রেরণ করেছেন।
নবাবগঞ্জ থানায় মামলাটি রুজু করেছে। মামলা নং ০৬। তারিখ ৫/৬/২০২২ ধারা ৪০৬/৪২০/৫০৬/৩৪ পেনাল কোডে রুজু। আসামিরা হলো, নিশা আক্তার (২৬) স্বামী ইয়াসিন মাহমুদ কাউসার/ পিতা মৃত সামসুল হক, শেফালী বেগম (৫৫) স্বামী মৃত সামসুল হক, রুজিনা বেগম (৩০), আঃ কুদ্দুস ( ৩৮), ফেরদৌস (৩৫) সর্ব পিতা মৃত সামসুল হক, রুপা আক্তার স্বামী আঃ কুদ্দুস। সর্ব সাং ভাড়ারিয়া পোস্ট ভোলারা, মানিকগঞ্জ।
বাদীর অভিযোগ নিশাত আক্তার স্বামীর অবর্তমানে স্বামীর অনুমতিক্রমে কলেজে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ এর জন্য পড়াশোনা করতে থাকে। ছেলের শ্বশুড়বাড়ির আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তাদের পরিবারীক ও লেখাপড়ার সব খরচ ফ্রান্স প্রবাসী স্বামী চালাতে থাকে।
পূর্বের শর্ত মোতাবেক স্ত্রী নিশাতকে তার কাছে ভিসার ব্যাবস্থা করে প্রবাসে নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে নিশােতের ইচ্ছে মতে পরিবারের ভিসায় নয় ছাত্র ভিসায় নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। এ থেকেই শুরু বিরোধের, তাই ২০২০ সালে ২য় বার ছুটিতে আসার পরে তার গর্ভে বাচ্চা ধারণ করেছিলো নিশাত আক্তার, স্বামী আবার ছুটি শেষে ফ্রান্স যাওয়ার পরে সেই বাচ্চাটি নষ্ট করে দেয় স্ত্রী নিশাত। অভিযোগ করেন ইয়াসিন মাহমুদ কাউসার।
ছাত্র ভিসায় যাওয়ার জন্য আইল টেস্ট করতে থাকে, ভিসা প্রসেসিং পদ্ধতির কাজ শেষ করে ভিসার জন্য ইউরোপ এর যে কোন দেশে যেতে বলে। সব ঠিক থাকলেও নিশাত আক্তার বাড়ির সবাইকে আমেরিকা নেওয়ার শর্তে সঙ্গী হিসেবে একজনকে পেয়ে নাটকীয় ভাবে সোজা আমেরিকায় চলে যায়।
এদিকে স্বামী তার জন্য ফ্রান্সে ফ্যামেলি বাসা নিয়ে, স্বপ্নের পৃথিবী তৈরি করে। হঠাৎ নিশাত আক্তারের ফোন বন্ধ হয়ে যায়, তার শ্বাশুড়ি শেফালী বেগমকে ফোন করেন, জানতে চান নিশাতের খবর, ওর মোবাইল বন্ধ কেন, উত্তরে শেফালী জানান নিশাতের কোন সংবাদ তিনি জানেন না।
একদিকে আত্মসম্মানবোধ, স্ত্রীর মায়া। অপরদিকে স্ত্রী গুম করার অপরাধও তুলতে চেষ্টা করছে মেয়ের পরিবার স্বামীর বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত নিশাতের পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন তল্লাশি করে জানাযায় এই নামে একজন আমরিকায় গিয়েছে তার নতুন পাসপোর্ট নাম্বারে। নতুন পাসপোর্ট নাম্বার EE0004796, প্রস্থান এর তারিখ ১৬/৫/২০২২ সময় রাত ১০ ঘটিকা, ছাত্র ভিসায় ঢাকা টু ইউএসএ।
এই প্রতারণার বিরুদ্ধে নিশাতের এলাকার ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ জলিল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি আমি যথাযথ ভাবেই জানতে পেরেছি যে স্বামীর খরচে লেখাপড়া সম্পন্ন করে ফ্রান্স প্রবাসী স্বামীর কাছে যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে না গিয়ে আমেরিকায় যায় নিশাত আক্তার। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান কাজটি ভালো হয়নি আমি এ কাজের জন্য নিন্দা প্রকাশ করছি।