
মোঃ রফিকুল ইসলাম মৃধা, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাকান্ডের খবর শোনার পরই মানিকগঞ্জে মুক্তিকামী নেতারা গঠন করেন ৭ সদস্য বিশিষ্ট বিপ্লবী পরিষদ। পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মাজহারুল হক চাঁন মিয়াকে।
পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, মোসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়া, ক্যাপ্টেন (অবঃ) আব্দুল হালিম চৌধুরী, খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার আলী চৌধুরী, মীর আবুল খায়ের ঘটু ও মফিজুল ইসলাম খান কামাল। তাদের নেতৃত্বে মানিকগঞ্জে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়।
২৬ মার্চ ক্যাপ্টেন (অবঃ) হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে মানিকগঞ্জে তালা ভেঙ্গে অস্ত্র লুট করে ছাত্র- জনতার মাঝে বিতরণ করা হয়। ক্যাপ্টেন (অবঃ) হালিম চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেন।
মানিকগঞ্জ সিঅ্যান্ডবি’র ডাক বাংলো ছিল হানাদার বাহিনীর জেলা সদরদপ্তর। এখান থেকে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নিধনযঞ্জ পরিচালনা করতো। তাদের মূল ব্যারাক ছিল পিটিআই-এর মুল ভবনে।
১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জে চূড়ান্ত বিজয় হলেও, আগে থেকেই বিভিন্ন থানার এলাকাগুলো ছেড়ে যেতে থাকে হানাদার বাহিনী। শঙ্কামুক্ত হওয়ার পর ১৩ ডিসেম্বর বিজয়ী বেশে মুক্তিযোদ্ধারা মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে সমবেত হন।
বিপ্লবী পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল হক চাঁন মিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।
মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন জানান, জেলার (তৎকালীণ মহকুমা) সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হয়েছিল গোলাইডাঙ্গায়। ওই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ব্রাশ ফায়ারে ৮১ জন পাক সেনা নিহত হয়েছিল। ওই যুদ্ধটি ঐতিহাসিক গোলাইডাঙ্গা যুদ্ধ নামে পরিচিত।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা তোবারক হোসেন লুডু জানান, ৯ মাসের যুদ্ধে মানিকগঞ্জে ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গুত্ব বরণ করেন। যুদ্ধে অবদানের জন্য খেতাবপ্রাপ্ত হন চারজন মুক্তিযোদ্ধা। তারা হলেন স্কোয়াড্রন লিডার (অবঃ) বদরুল আলম (বীর প্রতীক), ইব্রাহিম খান (বীর প্রতীক), শহীদ মাহফুজুর রহমান (বীর প্রতীক), এবং মোহাম্মদ আতাহার আলী খান (বীর প্রতীক)। তাদের মধ্যে আতাহার আলী জীবিত আছেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ছোট-বড় ৪২টি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে, ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলা (তৎকালীণ মহকুমা) হানাদার বাহিনীর দখল মুক্ত হয়।