
মো কামরুল হোসেন সুমন, মনপুরা প্রতিনিধি: ভোলার বিচ্ছিন্ন ও দুর্গম দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালের বেডে জায়গা না পেয়ে অনেক সময় বারান্দা ও ফ্লোরে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এ হাসপাতালের দোতলায় শিশু ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে যে সব রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন তার অধিকাংশ রোগী ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। আক্রান্ত রোগীর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি।
মনপুরা উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের কলাতলীর চর এলাকার কৃষক বাছেদ জানান, তার ১ বছর ২ মাস বয়সী ছেলে শিহাবের ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হলে গত ৪ দিন আগে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করান।
হাজিরহাট ইউনিয়নের সোনার চর এলাকার জেলে মিরাজ জানান, তাদের এক বছর ৫ মাস বয়সী শিশু ছেলে মিশকাত হোসেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে গত মঙ্গলবার সকালে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
মনপুরা ইউনিয়নের কলাতলীর চর এলাকার গৃহিণী রুমা বেগম জানান, তাদের ২ মাস বয়সী শিশু জোবায়ের ঠান্ডাজনীত রোগে আক্রান্ত হলে তাকে গত ৩ দিন আগে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
হাজিরহাট ইউনিয়নের চরযতি গ্রামের গৃহিণী রাবেয়া বেগম জানান, তাদের ৩ বছর বয়সী শিশু রিহান ঠান্ডাজনীত রোগে আক্রান্ত হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
এ বিষয়ে দায়িত্বরত নার্স বিথী সুলতানা বলেন, মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, গড়ে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন নিউমোনিয়া রোগী এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হচ্ছেন। আর ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন প্রায় ১২-১৩ জন। এখানে এসে কোন বেড খালি না পেয়ে এসব রোগীরা অনেক সময় হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসক ও নার্সরা এসব রোগীদেরকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। তবে, হাসপাতালে যথেষ্ট পরিমাণ স্যালাইন ও ওষুধ মজুদ রয়েছে বলেও তিনি দাবী করেন।
এদিকে, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুদের ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে কখনও ঠান্ডা আবার কখনও গরমের কারণে শিশু রোগী বেড়েছে হাসপাতালে।
মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ তৈয়বুর রহমানকে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাওয়া যায়নি। বেশির ভাগ সময়েই হাসপাতালে অনুপস্থিত থেকে ভোলা সদর উপজেলায়। তবে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ আশিকুর রহমান অনিক ভোলার বাণীকে জানান, মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ তৈয়বুর রহমান বিভিন্ন প্রশিক্ষণের কারণে হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকছেন। মেডিকেল অফিসার বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে এবং হাসপাতালে বিশুদ্ধ পানির অভাবে এ উপজেলার চরের মানুষের নদী-খালের পানির ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। ফলে এখানে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়ে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ তৈয়বুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, আমি গত সপ্তাহে ভোলা আসছি। আমি সপ্তাহে একদিন মনপুরা যাই। তিনি বলেন, জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে।