নিজস্ব প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের পদত্যাগ দাবী করে বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০’টার দিকে ক্লাস বর্জন করে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চাষাড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সংবাদ পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং সড়ক ছেড়ে স্কুল মাঠে অবস্থান নেয়ার অনুরোধ করেন। পরে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সফর আলী ভূইয়া ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) হাফিজুর রহমান মানিক শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্লাসে ফিরিয়ে নেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আমরা শ্রেণী কক্ষে পড়া দিতে না পারলে প্রধান শিক্ষক আমাদের ছবি তার মোবাইলে তুলে নিয়ে যেতেন। কখনো পড়া না পারলে তিনি আমাদের হাত দিয়ে শরীরে থাপ্পর দিতেন।
তবে সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, গত মাসের মতো আজকেও তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের ভুল বুঝিয়ে ও প্ররোচিত করে বিক্ষোভে বাধ্য করা হয়েছে । আমার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের করা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, খন্ডকালীন দুই শিক্ষক পদ করার পর নতুন করে দু’জন শিক্ষক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটি। আজকে ছিল তাদের নিয়োগ পরীক্ষা। এই পরীক্ষা বানচাল করার জন্যই ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, এসব ছাত্রীরা হচ্ছে কোমলমতি। তারা এখনো ষড়যন্ত্র কি তা বুঝে না। তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা বলানো হচ্ছে। বিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন প্রধান শিক্ষক ছিলনা। আমার যোগদান কেউ কেউ ভালো ভাবে নেয়নি।
বিদ্যালয়ের নতুন ভবন, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, লেখাপড়ার মান বৃদ্ধিসহ নানা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি অল্প সময়ের মধ্যে। আজকে আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করানো হচ্ছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমি সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন শিক্ষিকার সাথে কথা বলে জানা যায় অন্য তথ্য। সাবেক শরীর চর্চা বিষয়ক শিক্ষিকা সুমিতা নাথ, গানের শিক্ষিকা শাহীন চৌধুরী, ইংরেজী শিক্ষিকা ফরিদা আক্তার, সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষিকা শাসচ্ছুন্নাহার শিলা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আমরা কখনো প্রধাণ শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের করা অভিযোগের বিষয়টি জানতে পারিনি।
২০১৯’সালে রফিক স্যার বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এর পরে করোনা কারণে প্রায় দু’বছর বিদ্যালয় বন্ধ ছিলো। গত বছরের শেষের দিকে যখন বিদ্যালয় চালু হয় তখন থেকে এখন পর্যন্ত স্যার আমাদের সাথে এমন কোন আচরণ করেন নাই যাতে তার অন্য কোন উদ্দেশ্যর প্রকাশ পায়।
এই বিদ্যালয়ের দুজন খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন সোহেল ও বিল্লাল। গত ২৫’সেপ্টেম্বর তারা পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়। স্কলের সভাপতি সফর আলী ভূইয়া পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেন। তাদের স্থলে নতুন দু’জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০’টায় নতুন দু’শিক্ষকের নিয়োগ পরীক্ষার সময় নির্ধারন করা ছিল। সেই নিয়োগ পরীক্ষা বানচাল করার জন্যই আজকে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামায় চক্রটি। এবং রাতে বেলা বেশ কয়েকটি ব্যানার করে দেয়।
এদিকে স্থানীয়দের একটি সুত্র জানায়, পদত্যাগী খন্ডকালীন দু’শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের একটি চক্র প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। অনেক অবৈধ সুযোগ সুবিধা বন্ধ হয় গেছে চক্রটির।
এতে করে তার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতো। শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করায় তাদের প্রাইভেট শিক্ষার্থী ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, একটি কুচক্র মহল আমার ও বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করতে শিক্ষার্থীদের দিয়ে এসব করছে।