সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)প্রতিবেদক:
সিদ্ধিরগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। এসময় শিক্ষার্থীরা সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে শ্লোগান দিতে থাকে।
গতকাল সোমবার সকাল১১’টায় ক্লাস বর্জন করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চাষাড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান ও পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমানসহ সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রীদের বুঝিয়ে বিদ্যালয়ের ভেতরের মাঠে নিয়ে যায়। পরে বেলা ২ টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে এবং তার অপসারন দাবী করে।
এসময় কয়েজন শিক্ষার্থী উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, রফিক স্যার যখন ক্লাসে যান তখনি কৌশলে আমাদের শরীরে হাত দেন।
তারা বলেন শ্রেণী কক্ষে পড়া দিতে না পারলে তিনি ছাত্রদের ছবি তার মোবাইলে তুলে নিয়ে যেতেন। কখনো পড়া না পাড়লে তিনি আমাদের হাত দিয়ে শরীরে থাপ্পর দিতেন। তারা চায় না তাদের আর কোনো বোন তার দ্বারা হয়রানীর শিকার হোক। তার মতো শিক্ষক আমরা এ বিদ্যালয়ে চাই না। আমরা তার পদত্যাগ চাই।
এসময় শিক্ষার্থীরা নাসিক ৪, ৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবীতে আমরা আন্দোলন করলে তিনি নাকি আমাদের পরীক্ষা দিতে দিবে না। তিনি একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এমন কথা কীভাবে বলেন? তিনি আমাদের প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেছেন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন আমরা যেনো না করি।
এ বিষয়ে নাসিক ৪, ৫ ও৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম জানায়, আমি একজন মা এবং ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা আমারই মেয়ে। তাদেরকে হুমকি তো প্রশ্নই আসে না। আমি ছাত্রীদের বিক্ষোভের কথা শুনে ঘটনাস্থলে যাই। এবং তাদের অভিযোগ শুনে দু’দিন সময় চাই। যাতে করে বিষয়টি নিয়ে সকলের সাথে কথা বলে সমাধান করা যায়। কিন্তু তারা আমার সেই কথা না রেখে রাস্তায় গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। তখন আমি আর সেখানে না থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন চলে আসি মাসিক সভায় যোগদানের জন্য।
এদিকে সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের কেউ প্ররোচিত করে এই বিক্ষোভে বাধ্য করেছে। তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের করা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে তিনি জানান।
প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, এসব ছাত্রীরা হচ্ছে কোমলমতি। তারা এখনো ষড়যন্ত্র কি তা বুঝে না। তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা বলানো হচ্ছে। দীর্ঘ দিন বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিল না। আমার যোগদান কেউ কেউ ভালো ভাবে নেয়নি।
বিদ্যালয়ের নতুন ভবন, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, লেখা পড়ার মান বৃদ্ধিসহ নানা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি অল্প সময়ের মধ্যে। আজকে আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করানো হচ্ছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমি সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন শিক্ষিকার সাথে কথা বলে জানা গেছে অন্য তথ্য। সাবেক শরীর চর্চা বিষয়ক শিক্ষিকা সুমিতা নাথ, গানের শিক্ষিকা শাহীন চৌধুরী, ইংরেজী শিক্ষিকা ফরিদা আক্তার, সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষিকা শাসচ্ছুন্নাহার শিলা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আমরা কখনো প্রধাণ শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের করা অভিযোগের বিষয়টি জানতে পারিনি।
২০১৯ সালে রফিক স্যার এখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এর পরে করোনা কারণে প্রায় দুই বছর বিদ্যালয় বন্ধ ছিলো। গত বছরের শেষের দিকে যখন বিদ্যালয় চালু হয় তখন থেকে এখন পর্যন্ত রফিক স্যার আমাদের সাথে এমন কোন আচরণ করে নাই যাতে তার অন্য কোন উদ্দেশ্যর প্রকাশ পায়।
তবে গত কয়েকদিন যাবৎ শিক্ষার্থীরা এই বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করে। এবং আজকে হঠাৎ তারা শ্রেণী কক্ষ থেকে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে বিক্ষোভ শুরুকরে।
এদিকে বেলা ২’টায় বিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা এ.এস.এম অফিসার আবু তালেব। তিনি বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষিকা এবং এডহক কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলে বিস্তারিত বিষয়টি জানেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমরা ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।
এই বিদ্যালয়ের দু’জন খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন সোহেল ও বিল্লাল নামে। গত রবিবার তারা পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়। সেই শিক্ষকদের আবার ফেরত আনার জন্য ছাত্রীরা দাবী করেছে। আমরা পুরো বিষয়টিই তদন্ত করে দেখবো। এবং সেই অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে স্থানীয়দের একটি সূত্র জানায়, পদত্যাগী খন্ডকালীন দুই শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের একটি চক্র প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। অনেক অবৈধ সুযোগ সুবিধা বন্ধ হয় গেছে চক্রটির।
পদত্যাগী দুই শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্যের ইন্দনে রাতারাতি ফেস্টুন বানিয়ে ক্লাস চলাকালীন অবস্থায় রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
তাদের বিরুদ্ধে এমনও অভিযোগ রয়েছে, তারা শিক্ষক দীর্ঘদিন থেকে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন। এই প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে তারা পরীক্ষার আগেই প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের কাছে কৌশলে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিতেন।
এতে করে তার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতো। শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করায় তাদের প্রাইভেট শিক্ষার্থী ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে।
প্রশিক্ষক যোগদান করার পর থেকে নিজেই এসব প্রশ্নপত্র তার নিয়ন্ত্রনে রেখে তৈরি করতেন। এর ফলে ওই দু’শিক্ষককের প্রাইভেট শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এসব নানাবিধ কারনেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রাইভেট পড়া শিক্ষার্থীদের ফুঁসলিয়ে বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এ আন্দোলন করানো হয়।####