ডেস্ক রিপোর্ট:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে টানা ১৯ দিন পর আনন্দ উচ্ছ্বাসে কাজে ফিরেছে সিলেট অঞ্চলের চা শমিকরা।
আজ রোববার সিলেটের অধিকাংশ বাগান সাপ্তাহিক নির্ধারিত ছুটি থাকার পরও বেশ কয়েকটি বাগানের চা শ্রমিকরা কাজে ফিরেছে। সকালে কাজে ফেরা শ্রমিকরা বাগানের অভ্যন্তরে দলে দলে আনন্দ মিছিল সহকারে কাজে যোগদান করে। টানা ১৯ দিন কর্মবিরতির পর চা শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে ফিরে কাজ করতে পারায় প্রত্যেকের চোখে-মুখে আনন্দ উচ্ছ্বাসের অনুভূতি লক্ষ্য করা যায়।
রোববার সকালে সিলেট নগরীর সন্নিকটস্থ মালনিছড়া চা বাগান, দলদলি চা বাগান,লাক্কাতুরা চা বাগান, খাদিম চা বাগান ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। কাজে যোগদান ও আনন্দ মিছিলে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সাধারণ শ্রমিকসহ পঞ্চায়েত নেতারা।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, ‘চা বাগানে অচলাবস্থার অবসান ঘটেছে। সকাল থেকে বেশ কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে। তবে কিছু বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আজ কাজে যাচ্ছে না তারা, সে সকল বাগানের শ্রমিকরা আগামীকাল সোমবার থেকে কাজে যোগদান করবে। এছাড়া সকাল থেকে কিছু শ্রমিক দলে দলে আনন্দ র্যালি করে কাজে যোগ দিয়েছে।
এদিকে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার সবকটি চা বাগানের চা শ্রমিকরা মজুরি বাড়ার পর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আজ কাজে যোগ দেয়। সকাল থেকে ঘর থেকে বের হয়ে দলে দলে উৎসবমুখর পরিবেশে চা উত্তোলনের কাজে যোগ দেয় তারা। তবে কয়েকটি বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি জনিত কারণে তারা আগামীকাল সোমবার স্ব স্ব বাগানে কাজে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে চা শ্রমিক নেতারা। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা-বাগানের শ্রমিক লিটন হাজরা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমরা তাই মেনে নিয়েছি। আমরা এখন বাগানের জন্য কাজ করব। যদিও ১৭০ টাকায় আমাদের এই সময়ে চলাফেরা কষ্ট হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাই আমরা কাজে নেমেছি।’
ফিনলে চা কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, ‘আমাদের চা বাগানের শ্রমিকরা সবাই কাজে নেমেছেন, সবাই কাজ করছেন।’ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী চা শ্রমিকরা নতুন মজুরি ১৭০ টাকা পাবে। এ ছাড়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী তাদের পেছনে বাগানের দৈনিক ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হবে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হবিগঞ্জ জেলার মনু-দলই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, ‘দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাধারণ চা শ্রমিকেরা আজ রোববার থেকে কাজে যোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, ভ্যালির অন্তর্গত ২৩ চা বাগানের পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দকেও শ্রমিকদের কাজে যোগদানের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন দেশের ১৬৬ চা বাগানের দেড় লাখের বেশি শ্রমিক। সেদিন থেকে চার দিন পর্যন্ত দুই ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন করে তারা। এরপর গত ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে চা শ্রমিকরা। গত ১৯ আগস্ট রাতে মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার বিষয়ে একটি চুক্তি হলেও সেটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যায় চা শ্রমিকরা। এর মধ্যে কয়েক দফা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও সমাধান হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে গত সোমবার (২২ আগস্ট) দুপুরে শ্রমিকদের একাংশ আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরে। আরেক অংশ আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এদিকে চা শ্রমিকদের টানা ধর্মঘটে সারাদেশের বাগান থেকে চা-পাতা উত্তোলন, কারখানায় প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদন বন্ধ থাকে। এতে স্থবির হয়ে পড়ে দেশের চা শিল্প। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর পাশাপাশি আনুপাতিক হারে তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে দৈনিক মজুরি হবে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকালে গণভবনে চা শ্রমিকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা বাগান মালিকপক্ষের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের রোববার থেকে কাজে ফেরার আহ্বান জানান। পরে সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, সব আলোচনার পর যেটি হয়েছে; সেটি হলো শ্রমিকদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করে দিয়েছেন ১৭০ টাকা। চা বাগান মালিকপক্ষের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহ আলম। এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার থেকে সিলেট অঞ্চলসহ সারা দেশের চা শ্রমিকরা নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দেয়।